ছাত্র রাজনীতি

ছাত্র রাজনীতি। দুই শব্দের এই বাক্যটি ছাত্রজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা। তারাই দেশের কান্ডারী। তাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। তারা সারা বিশ্বের মধ্যে দেশ ও জাতির প্রতিনিধিত্ব করে। মূলত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই বলেই শিক্ষার্থীদের এত মূল্যায়ন।তাই শিক্ষার্থীদের কাছে পরিবার তথা জাতির একটাই প্রত্যাশা, তা হলো লেখাপড়া। মূলত এ কারণেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা। শুধুমাত্র আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবেই যুগযুগ ধরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেবা দিয়ে আসছে। এর বাইরে আর কোন লক্ষ্য তাদের নেই। এখানে শিক্ষার্থীরা আসবে, লেখাপড়া শিখবে তারপর আদর্শ মানুষ হিসাবে এখান থেকে বের হবে। আদর্শ মানুষ হিসাবে তারা তখন দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত হবে। মূলত এটাই সার্কেল। তাহলে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কোথায়? কিন্তু বর্তমানে ছাত্রত্ব শব্দটির সাথে বই-খাতা কিংবা কলমের যতটা সম্পর্ক থাকা উচিত ছিল ঠিক ততোটা সম্পর্ক নেই; শুধু ছাত্রের সাথে রাজনীতি শব্দটি যোগ হওয়ার কারণে। যে সময়টাতে ছাত্রদের কলম দুর্বার হওয়ার কথা ঠিক সেই সময়টাতে যখন ছাত্রের হাতে অস্ত্র গর্জন করে ওঠে তখন জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে গড়াচ্ছে তা অনুমান করতে খুব বেশি পন্ডিত হওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। ভিন্নমতের ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব, নিজেদের মধ্যে কর্তৃত্ব-প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষ, টেন্ডারবাঁজি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকরণ, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে দিন দিন ছাত্রদের একাংশ জড়িয়ে যাচ্ছে। এদের সংখ্যা কম হলেও এদের কর্তৃত্বের কারণে সবাই তটস্থ থাকতে বাধ্য কেননা এদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বহুমুখী ক্ষমতা রয়েছে। যে ছাত্রনেতাদের সকল ছাত্রদের অধিকার রক্ষা করা দায়িত্ব সেই তারাই যখন নিজ কিংবা দলীয় স্বার্থের দোহাই দিয়ে সকল শিক্ষার্থীর অধিকার কেড়ে নেয় তখন সাধারণ ছাত্রদের ক্ষতির পরিমাণ কোন মানদণ্ডেই হিসাব করা যায় না। ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িতদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সৃষ্ট সমস্যা যখন প্রকট হয়, ছাত্র নিহত হয় তখন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই সে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। এ দেশের উচ্চশিক্ষার সাথে সেশনজট শব্দটি ওতপ্রতোভাবে মিশে গেছে তার ওপরে আবার ছাত্ররাজনীতিকদের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সাধারণ ছাত্রদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। শুধু ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িতে কিছু ছাত্রের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে এদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময় মাসের পর মাস বন্ধ ছিল। বহু কলেজের ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে শিক্ষকদের মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবহন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। চাঁদা না দেয়ার কারণে কিংবা দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বের করে দেয়া, পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য করাসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। ছাত্রনেতা যখন পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি তখন তারা শিক্ষকদের আল্টিমেটাম দিয়েছে পাস করিয়ে দেয়ার জন্য কিন্তু শিক্ষক যখন তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হননি তখন তারা ভাংচুর চালিয়ে শিক্ষার পরিবেশকে ভীতিকর করেছে। কিছু উগ্র ছাত্ররাজনীতিকের কারণে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন প্রায়ই হুমকির মুখে পড়ে। বিভিন্ন সময় এদের দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট অচলাবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে চরম ক্ষতি ডেকে আনে। যার ফলে কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন শেষ হতে না হতেই তাদের চাকরির তালাশের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এশিয়ার এই তিনটি দেশের মধ্যে ভারত,বাংলাদেশ,পাকিস্তান মহামারী আকার ধারণ করেছে।এই ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার এর ফলে একটা ছাত্রসমাজ তথা একটি জাতিকে কুলুষিত করে তোলে।তারা উদ্দেশ্যহীন কোনো এক যাত্রার পথিক হয়ে নিজের অজান্তেই জীবনটা ধ্বংস করে ফেলে। সুতরাং একজন ছাত্রকে মনে রাখতে হবে ছাত্রজীবনই তার ক্যারিয়ার গঠনের একমাত্র সুযোগ। এখন থাকতে আদর্শের বীজ বুনতে হবে।তবেই তারা জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবে।

Comments

Popular Posts